রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মুলাদী-মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে বরিশাল জেলা পরিষদের নামে অভিনব কায়দায় প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। একটি সংঘবদ্ধ চক্র জেলা পরিষদের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজেশে খাস কালেকশনের নামে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। মীরগঞ্জ ফেরিঘাটের পশ্চিম পাড়ের গ্যাংওয়েতে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে টোল আদায়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরে মাঝ নদীতে ট্রলারে পুনঃরায় খেয়া ভাড়া আদায় করায় জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য চাঁদাবাজীর অভিযোগ ওঠে।
এনিয়ে হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হলেও কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারছেনা। কেউ প্রতিবাদ করলেই চাঁদাবাজী চক্রের বাহিনী চড়াও হয়ে উঠে এবং প্রতিবাদকারীকে লাঞ্ছিত হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা চাঁদাবাজী থেকে রেহাই পেতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানাগেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে অনিয়ম ও নৈরাজ্য চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হিজলা-মুলাদী- মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বাসীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায় করে আসছে। ওই মহলটি খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে রিজার্ভের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। খেয়াঘাট দিয়ে হাতে বহনযোগ্য ব্যাগ নিতেও ইজারাদরকে টাকা দিতে হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকে তাকে লাঞ্চিত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম নৈরাজ্য ও জন দূর্ভোগ নিরসনের জন্য হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দীগঞ্জের সাধারন মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করলেও কোন সুফল পায়নি।
রাজনৈতিক নেতারা এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট চক্র থেকে মীরগঞ্জ খেয়াঘাট মুক্ত করার ঘোষনা দিলেও ঐ মহলটি নানান কৌশলে খেয়াঘাটে কর্তৃত্ব দখল করে রেখেছে। চলতি বছর মীরগঞ্জ খেয়াঘাটটি অপেক্ষকৃত কমমূল্যে ইজারা নেওয়ার পায়তারা করতে থাকে। গত পহেলা বৈশাখ থেকে জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারীর মাধ্যমে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে টোল আদায় করতে থাকলেও সিন্ডিকেট চক্রটি উচ্চমান সরোয়ার হোসেনকে ম্যানেজ করে খেয়াঘাটে টোল আদায় করে চলছে। আদায়কৃত টোল জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা না দিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ১৪ই মে বরিশাল জেলা পরিষদের ৭ম বারের ইজারায় সর্বোচ্চ দর দিয়ে মুলাদী উপজেলা বাসিন্দা আলমগীর হোসেন মীরগঞ্জ খেয়াঘাটের ইজারা পেলেও ওই মহলটি ক্ষিপ্ত হয় তাৎক্ষনিক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের জসিম গাজী জানান বরিশাল থেকে ফেরার পথে ফেরির গ্যাংওয়েতে তার কাছ থেকে ১০টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। ট্রলারে ওঠার পরে মাঝ নদীতে এসে তার কাছ থেকে পুনঃরায় ১০টাকা খেয়া ভাড়া নেওয়া হয়। একই নদীতে দুই বার খেয়া ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদ করায় ট্রলার চালক তার ওপর চড়াও হয়।
মুলাদী উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান গত সোমবার বিকালে বরিশাল থেকে একটি হাত ব্যাগ নিয়ে ফেরার পথে ফেরির গ্যাংওয়েতে তার কাছে ৫০ টাকা চাওয়া হয়। কারণ জানতে চাইলে বলা হয় ব্যাগ নিয়ে যেতে হলে ভাড়া বাবদ টাকা দিতে হবে। ওই টাকা দেওয়ার পরে ট্রলারে উঠে মাঝ নদীতে পুনঃরায় ১০টাকা ভাড়া নেয় ট্রলার চালক। ভুক্তভোগী যাত্রীরা ফেরিঘাটের ভোগান্তি নিরসনে অবিলম্বে জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।জেলা পরিষদের পক্ষে টোল আদায়কারীর প্রধান মইনুল ইসলাম পারভেজ জানান জেলা পরিষদের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে ৫০ দিনের খাস কালেকশন চলছে।
এব্যাপারে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটের খাস কালেকশন কমিটির প্রধান ও জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী সরোয়ার হোসেন জানান জনবল সংকটের কারণে মইনুল ইসলাম পারভেজকে টোল আদায়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মানিকহার রহমান জানান খাস কালেকশন সাব ইজারা দেওয়ার বিধান না থাকলেও একটু সমস্যা ও জনবলের অভাবে সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে মীরগঞ্জের পশ্চিম পাড়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলেই দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। গত ১৫ মে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মইদুল ইসলাম জানান মীরগঞ্জ ফেরিঘাটের জনদুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে ফেরিঘাটটি সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা বুঝিয়ে দিয়ে মুলাদী সংলগ্ন পূর্বপাড়ে টোল আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ্র দাস জানান, মীরগঞ্জ ফেরিঘাটের অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply